মোটা খালু হুড়মুড় করে বাড়ীর কাজের লোকদের বাথ রুমে ঢুকে পড়েছেন। ডায়াবেটিক্সের রোগী। তার মূত্রাবেগ প্রবল। পুরানো নোংরা বাথরুম। তেলাপোকার অভয়আশ্রম। একটা তেলাপোকা মোটা খালুর ঢোলা প্যান্ট বেয়ে প্রায় নো এন্ট্রি জোনে ঢুকে গেছে তিনি প্রবল বেগে পা ঝাকাচ্ছেন....। আজ তিথির বিয়ে। বাইরের গেটে ব্যান্ড পার্টি সানাই বাজাচ্ছে...তিথি তার নীল তোয়ালে দিয়ে অনবরত চোখ মুছে যাচ্ছে ...পাত্রের মা বিখ্যাত লেখক আলতাফ মাহমুদের স্ত্রী নূরী বেগম তিথির মাকে মোবাইলে এক হাত নিয়েছেন ..বরের জুতা নাকি এক সাইজ ছোট হয়েছে ....মোটা খালু যাবেন চক বাজারে পাত্রের জন্য এক সাইজ বড় জুতোর খোঁজে.....
জনাব আলতাফ মাহমুদ অতি সু-লেখক। আঞ্চলিক ভাষার অভিধান থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস দারুন লেখেন। ২১শের বই মেলায় প্রায় ১০/১২ টি বই প্রকাশিত হয়। বিশেষ ইএসপি ক্ষমতা আছে তার । অদ্ভূত ভাবে মানুষের চরিত্রের গন্ধ পান। একটা বেসরকারী এন জি ও তে আছেন । স্ত্রী মিসেস নূরী বেগম সারাক্ষণ ভিনদেশী সিরিয়াল দেখেন টিভিতে। তার ফেসবুক পেজ কোরআন, হাদিস ,রেডিও মুন্না আর রান্না বিষয়ক নিউজ ফিডের দখলে। আলতাফ মাহমুদ এর নানীর দেশের মেয়ে নূরী বেগম। নানীর ধারনা এই মেয়ে জন্মের আগেই বেহেশতে দু বেলা হরলিক্স খেয়েছে এমন পাত্রী হাত ছাড়া করা যাবে না অতএব তাড়াহুড়ো করে নাত বৌ করে আনা হলো তাকে । বাসর রাতেই লেখক সাহেব বুঝে গেলেন এই বিড়াল মারার ক্ষমতা ঈশ্বর তাকে দেননি। বাকী জীবনে এই সুন্দরী বিড়াল তাকেই মেরে ফেলবে........
শুক্রবার সকাল ১১টা । কাছে কোথাও ঢাঁকের শব্দ হচ্ছে । মা দূর্গা আসছেন এবার ঘোড়ায় চেপে। আজ তার আগমনের ষষ্টী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টি,এস,সি মোড় । ছাই রঙের ইয়ামাহা আর-১৫ মোটর বাইকের হাতল ধরে দাড়িয়ে আছে এক তরুন। ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি হাইট। চোখে রেবান ব্যান্ডের কালো রোদ চশমা। কালো টি শার্টে বড় বড় অক্ষরে ইংরেজীতে লেখা “আই হেইট হ্যাভেন”। বাইকের সাথে ম্যাচ করা ছাই রঙের টিশট রিস্ট ওয়াচ । কাধে ঝোলানো নাইকোন ডি-৫০০ প্রমো ফোর কে আল্ট্রা এইচডি প্রফেশনার ক্যামেরা। এই তরুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না। একটা দামী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালেয়ে ভর্তি করে দিয়েছেন তার বিখ্যাত বাবা। ছাত্র হিসেবে অতি নিম্ন মানের। তবে অসাধারন ছবি তোলে সে। ছবির বিষয় “প্রকৃতি ও শিশু”। তার সামনে দুজন কিশোর বাদাম বিক্রেতা বসে আছে। প্রতি শুক্রবার দুই কেজি বাদাম কিনতে আসে এখানে। ৩০ মিনিট পরে তাকে দেখা গেল হ্যাপির সাথে সবাই কে বাদাম বিলি করতে। হ্যাপির বয়স পাঁচ বছর। শতাধিক শিশুর সাথে একটা এতিম শিশুদের হোমে থাকে। হ্যাপির সাথে বেশী ভাব এই তরুনের। হ্যাপী কথা বলতে পারে না। এই তরুনও প্রায় বোবা প্রকৃতির খুব প্রয়োজন না হলে কথা বলেন না। শরতের এই মিষ্টি সকালে অপটু হাতে বাদাম ভেঙ্গে খাচ্ছে শিশুরা এই তরুন মন্ত্রমুগ্ধের মতো একটার পর একটা ছবি তুলে যাচ্ছেন। এই অনাথ শিশুরা জানেই না কত দামী ক্যামেরাই তাদের ছবি তোলা হচ্ছে। ইনি জনাব আবীর মাহমুদ । বিখ্যাত লেখক আলতাফ মাহমুদ ও মিসেস নূরী বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র.....
আজ শনিবার। সকাল ১০.০৫মি. অক্টোবরের ৮ তারিখ। সাদা সুটের সাথে মিলিয়ে সাদা টাই সাদা সু পরে বসে আছেন এক যুবক। চোখে পাওয়ারফুল চশমা। সাদা রঙের এ্যাপেল ম্যাকবুক প্রো ল্যাপটপ কোলের উপর রাখা আছে । অক্টোবরের এই গরমে এই রকম পোষাকে তার ঘেমে যাবার কথা। সে ঘামছে না। রুমের তাপমাত্রা সেট করা আছে ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আজ দেবী দূর্গেশ্বর নন্দিনির আগমনের মহা সপ্তমী । মা এবার অশ্বারোহীনি। এ বছর অমঙ্গলের আশংঙ্খা। আনন্দে ভেসে যাচ্ছে পুরো ঢাকা শহর। ঢাঁকের শব্দে খুশির জোয়ার কিন্তু সে কোন শব্দ শুনতে পারছে না। সে বসে আছে মার্কিন দূতাবাসের সাউন্ড প্রুফ ওয়েটিং রুমে। পূজোর ছুটিতে দূতাবাস বন্ধ। তাকে আনা হয়েছে অন্য কারনে। কম্পিউটার এন্ড টেলিকমনিকেশন বিষয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষ করেছেন তিনি কয়েক মাস আগে। তার ব্যাগে একটা বিশেষ ইলেট্রনিক ডিভাইস আছে । সে আর রতন মিলে তৈরী করেছে । রতনের বয়স সতের। ক্লাস এইট পর্যন্ত লেখাপড়া জানে। মাকে নিয়ে থাকে আইডিবি কম্পিউটার মার্কেটের পাশের একটা বস্তিতে। নষ্ট মাদার বোর্ড রিপিয়ার করে।তাদের তৈরী করা এই ডিভাইস যে কোন ডিজিটাল সার্কিটের ম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের সাথে সিনক্রোনাইজ করে লজিক গেটের এ্যালগরিদম ভেঙ্গে ফেলতে পারে। এটা দিয়ে যে কোন সিকিউরিটি সিসটেম হ্যাক করা যায়। ডিভাইসের ওপারেটিং প্রোগ্রাম সে নিজে লিখেছে। মিনিট দশেক পরে ডাক পড়লো ভিতরে। বড় একটা টেবিলে বসে আছেন তিনজন এফ,বি আই অফিসার। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেলফোন একসিস করতে যে কয়জন অফিসারের প্রটোকল লাগে না তিন জনের মধ্যে একজন সেই গ্রেডের অফিসার। তার সামনে অপশন দেয়া হয়েছে দুইটি। এফ,বি আইয়ের পক্ষে কাজ করতে হবে অথবা তার সাথে খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে। সময় ৪৮ ঘন্টা। দূতবাস থেকে যখন বেরিয়ে এলো যুবক। সন্ধ্যা হয়ে গেছে ঢাঁকের শব্দে প্রাণের উচ্ছ্বাস। মন্ডপে মন্ডপে নিয়ন বাতির আলোয় এই চেনা শহর কেমন অচেনা লাগছে।। সামনে কালো রঙের BMW X5 গাড়ী । এখন থেকে ৪৮ ঘন্টা এই গাড়ী তার। খামে পিন নম্বর সহ ক্রেডিট কার্ড আছে গাড়ীর ড্রাইভিং সিটে। এই হাই প্রোফাইল টপ সিক্রেট যুবকের নাম কবির মাহমুদ। আলতাফ মাহমুদ ও নূরী বেগমের বড় ছেলে.....
রবিবার বিকেল ৫.৪৫মি. । শারদীয় দূর্গৎসবের মহা অষ্টমী। কুমারী মাতৃরূপে মন্ডপে মন্ডপে পূজিত হচ্ছেন মা দূর্গা আজ। ঢাঁকের শব্দ ছাপিয়ে আইডিবি ভবনের সামনের রাস্তায় একদল উত্তেজিত মানুষের জটলা। আবির মাহমুদ তার বাইক থামিয়ে জটলার দিকে এগিয়ে গেলেন। এক্সিডেন্ট হয়েছে একটা রেড ওয়াইন কালারের টয়োটা এ্যাভলনের সাথে। ১৬/১৭ বছরের একটা ছেলে রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ীর সাথে ধাক্কা খেয়েছে। তবে আঘাত খুব বেশী গুরুতর না। ড্রাইভার হাতজোড় করে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। ছেলেটি আবীর মাহমুদকে প্রায় জডিয়ে ধরলো। আবীর মাহমুদ রতনকে দ্রুত বাইকে তুলে বেরিয়ে গেল কাজীপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের দিকে...... গাড়ীর পিছনের সিটে বসা এক তরুনী ঘটনার আকস্মিকতায় ফ্রিজ হয়ে গেছে। তাদের ড্রাইভার মজিদ চাচা একজন দক্ষ চালক তার চল্লিশ বছরের ক্যারিয়ারে কোন দূর্ঘটনার রের্কড নেই। কয়েক মুর্হূত পরে তার চোখের সামনে লম্বা চুলের এক রাজপুত্রের এন্ট্রি। তিথি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। এমন সুদর্শন সু-পুরুষ আগে দেখেনি সে....।ধন্যবাদ দেবার আগেই ইয়ামাহা আর-১৫ হাই স্পীডে সামনের গাড়ীর ভিড়ে হারিয়ে গেল। সে আজ পরেছে লালপেড়ে সবুজ রঙের জামদানী শাড়ী। মা তাকে সুন্দর করে চুল বেঁধে দিয়েছেন। তাকে লাগছে শ্রী-রাঁধিকার মত । তিথি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালে কম্পিউটার এন্ড টেলিকমুনিকেশন বিষয়ে পড়াশুনা করছে। এ বছর থার্ড ইয়ার। যে যাচ্ছে মিরপুরের দিকে নবনীতাদের বাসায়। নবনীতা হচ্ছে তার সব থেকে প্রিয় বান্ধবী অসম্ভব মেধাবী। তাদের ডির্পাটমেন্টের সব থেকে সেরা ষ্টুডেন্ট। নবনীতার বাবা ঢাকা শহরে অটো রিক্সা চালিয়ে সংসার চালায়। শ্যওড়াপাড়ায় দেড় রুমের একটা বাসা আছে ওদের। স্কুল লাইফে তিথির কোন হিন্দু বন্ধু ছিল না। দূর্গাপূজা কাছ থেকে দেখিনি তিথি। নবনীতা ক্লাসের সবাই কে এড়িয়ে চলে তবে তিথির সাথে একটু হাই হ্যালো হয়। সে প্রায় জোর করেই নবনীতাদের বাড়ী দাওয়াত নিয়েছে এক সাথে পূজা মন্ডপে কুমারী পূজা দেখবে ইচ্ছে মত ফুঁচকা আর ঝাল মুড়ি খাবে…
কনে দেখা শেষ বিকেলের আলোকে বিদায় জানিয়ে নিয়নের আলোয় আলোকিত পূজা মন্ডপ। ঢাঁকের তালে আর ধূঁপের ধোঁয়ায় ধূঁনচি নৃত্যের ছন্দে...দূর্গা মায়ের ডাগর নয়নে শ্রদ্ধাঞ্জলির পূলক। ঢাকা শহর যেন বৃন্দাবনের হরিতে হরষিত। মা আজ রহস্যময়ী। প্রথম প্রণয় ঘেরা কিশোরীর মত লাজে লাজুক। ঝাঁঝর করতাল আর খরতালে কঙ্কনের রিনিঝিনি। হৃদ বৃন্দাবন যেন জেগেছে আজ ঢাকা শহরে। তিথি নবনীতার সাথে ঘুরে ঘুরে মন্ডপের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করছে। কৌতুহলের অত্যাচারে নবনীতা বিরক্ত। নানা রঙের পোষাকে শিশুদের কলরব। এক লম্বা চুলের যুবক তার নাইকোন ডি-৫০০ প্রমো ফোর কে আল্ট্রা এইচডি প্রফেশনার ক্যামেরা দিয়ে কুমারী রুপে সাজানো শিশু কন্যার ছবি তুলে যাচ্ছে। আজকে তার ট্রপিক কুমারী মাতৃরূপ। মন্ডপ থেকে বেরিয়ে তার চোখে পড়লো বেশ কিছু দরিদ্র শিশুদের সাথে দুই কন্যার ঝাল মুড়ি খাবার দৃশ্য। সে সেই দৃশ্য দূর থেকে ধারন করতে লাগলো শক্তিশালী ক্যামেরায়। সেই দৃশ্যের সাথে অজান্তে ধরা পড়লো এক শ্রী-রাধিঁকার প্রতিবিম্ব। কৃষ্ণের হৃদয়ে প্রথম প্রণয়ের বাশঁরী। যার সুরে এখনো পাগল রাধাঁরানী। মন্ডপের স্পীকারে তখন বেঁজে চলেছে......... " বাজলো তোমার আলোর বেণু, মাতলো রে ভুবন আজ প্রভাতে সে সুর শুনে খুলে দিনু মন।।
আবির মাহমুদ গভীর ভালোবাসায় আকন্ঠ ডুবে গেল সেই অচেনা শ্রী-রাধিঁকার প্রেমে.............
বেলা ৯.৩০মি. আজ দেবী দূর্গার মহা নবমী। কবির মাহমুদ ঘুম থেকে উঠেছেন এই মাত্র। তার ল্যাপটপের ইউএসবি পোর্ট কাজ করছে না। সে ফোন দিল রতন কে...। গতকাল রতনের উপর যথেষ্ট ধকল গেছে। আইডিবির সামনের রাস্তায় একটা প্রাইভেট গাড়ীর সাথে ধাক্কা খেয়েছে সে। গায়ে প্রচুর ব্যাথা কোন রকম উঠে ফোন ধরলো সে... “হ্যালো কবির মামা? কি বিষয় ফোন দিলেন যে... তুই কোথায়? বাসায় আসতে পারবি? মামা কাল রাতে গাড়ির লগে ধাক্কা খাইছি..তয় বেশী লাগে নাই আবির মামা আমারে নিয়া ডাক্তার দেখাইছে....আমি আজ যাইতে পারুম না....” রতন নামের ছেলেটির সাথে কবিরের প্রথম পরিচয় হয় কম্পিউটার সার্ভিসিং এর দোকানে....মাদার বোর্ডের যে কোন আইসি নিখুঁত ভাবে লাগাতে পারে । গত তিন বছর ধরে একটা ইল্ট্রেনিক্স ডিভাইস নিয়ে কাজ করছে কবির মাহমুদ। এই ডিভাইস যে কোন ডিজিটাল সার্কিটের ম্যাগনেটিক ফিল্ডের রেডিয়েশনের সাথে সিনক্রোনাইজ করে লজিক গেটের এ্যালগরিদম ভেঙ্গে ফেলতে পারে। এটা দিয়ে যে কোন সিকিউরিটি সিসটেম হ্যাক করা যায়। এই ডিভাইসের হার্ডওয়ারের কাজ গুলি রতনকে দিয়ে করিয়েছে কবির মাহমুদ। ভেরী টপ সিক্রেট এই ডিভাইসের নাম এসডি 1.0। তাদের বাড়ীতে একটা রুমে রতন কাজ করে। ওয়ার্ক ষ্টেশন,সোল্ডারিং আয়রন, সহ নানা যন্ত্রপাতিতে ভরা সেই ঘর। । নূরী বেগম রতনকে একদম সহ্য করতে পারেন না। একদিন তাকে নানী ডেকে ছিল রতন। “এই ছেলে আমাকে নানী বলবেনা আমি কি নানী বয়সী দেখতে? আমার ছেলেদের এখনো বিয়ে হয় নাই এই শয়তান ছেলে আমাকে নানী ডাকে”সে কি চেচামেচি নূরী বেগমের। রতন এই বাড়ীতে যখন আসে পারত পক্ষে এই মহিলার সামনে পড়তে চাই না। এফবিআইয়ের প্রস্তাব নিয়ে বেশ চিন্তায় কবির মাহমুদ। হাতে সময় আছে মাত্র একদিন। বেশ কয়দিন আগে রাতের বেলা পরীক্ষা মুলক ভাবে এই যন্ত্রের কিছু টেষ্ট নেওয়া হয়। প্রথমে রতনের মোবাইল ফোনের পার্সওয়াড ভাঙ্গা হয় তার পর কবিরে এ্যাপেলের ম্যাকবুক প্রো.সব শেষে আবীরের ম্যাকবুক এয়ার। আবীরের পার্সওর্য়াড ভাংতে সব থেকে বেশী সময় নেয় এস,ডি 1.0। আবিরের পার্সওয়াড ছিল @happymybaby. এই ধরনের পার্সওয়াড সিসটেমে ইনফিনিটি লুপ তৈরী করে। এস,ডি1.0 পরীক্ষা করার সময় আবীর তার শক্তিশালী ক্যামেরায় ভিডিও ক্লিপ তুলে রেখেছে। হ্যাপীর বাদাম খাওয়ার ছবি ও ভিডিওর সাথে এসডি-1.0- এর পরীক্ষার ভিডিও ক্লিপ ইউটিউবে আপলোড করে ফেলে। আবীর জানে না ইউটিউবের উপর এফবিআই এর কঠিন নজরদারী। এফবিআই এর প্রস্তাব ডিনাই করা মানে সুইসাইড করা। কোন ভাবেই এদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কবীর ক্রেডিন্ট কার্ডের ব্যালেন্স চেক করে দেখেছে অনেক টাকা। এই টাকা সে কিভাবে খরচ করবে বুঝতে পারছে না.........
শুভ বিজঁয়া। বিকাল ৩.৪০মি. দেবী দূর্গা ফিরে যাবেন তার স্বামী গৃহে কৈলাশে। অশ্বেযোগে এসেছিলেন অশ্বেই তার গমন। মন্ডপে মন্ডপে কোটি ভক্তের হৃদয়ে বিদায়ের বেদনার বেহাগ। আইডিবি ভবনের পাশের বস্তীতে একটা দামী কালো রঙের BMW-X5 গাড়ী। রতন অন্ধ মাকে নিয়ে কবির মাহমুদের সাথে গাড়িতে উঠলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ঢাকার একটা নাম করা বেসরকারী চক্ষু হাসপাতালে সামনে এসে দাড়ালো গাড়ী । ডাক্তারের সাথে কবিরে আগেই কথা হয়েছে কর্নিয়া সংযোজন করতে হবে। অপারেশন সহ সমস্ত খরচ এডভান্স করেছে সে। এফবিআই তার জন্য এম,আইটির স্কলারশীপ দিয়ে আমেরিকায় নিয়ে যাচ্ছে । এটা তার পাবলিক আইডেন্টি মূলত সে কাজ করবে এফ বি আইয়ের হয়ে। আগামী মাসে ইউএস যেতে হবে। রতনের অন্ধ মা কিছুই বুঝতে পারছে না। রতন কবিরের হাত শক্ত করে ধরে আছে। রতনের চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ছে । সন্ধ্যায় বুড়িগঙ্গার বুকে আলোর রশ্মিতে প্রতিফলিত ঝলমলে জলে প্রতিমা বির্সজনের আয়োজন। হিন্দু সম্পদ্রায়ের রতনের মনে হচ্ছে যাবার আগে মা দুর্গা তার চোখের মায়াবতী দৃষ্টি এক অন্ধ মায়ের চোখে স্থাপন করে গেলেন........নৌকার লাউড স্পীকার থেকে প্রচন্ড শব্দে গান ভেসে আসছে...... দশমীর এই সন্ধে বেলা..... সাঙ্গ হলো সিঁদুর খেলা.... মায়ের ঘরে ফেরার পালা...
নূরী বেগম তাকিয়ে আছেন বিশাল আকৃতির এলইডি টিভি স্ক্রীনের দিকে। সেখানে ভীনদেশী সিরিয়াল চলছে। তিনি মনঃসংযোগ করতে পারছেন না। আগামি এক মাসের মধ্যে তার বড় ছেলে কবির মাহমুদ স্কালারশীপ নিয়ে ইউএস চলে যাবে। এই এক মাসের মধ্যে তার বিবাহর আয়োজন করবেন তিনি। কিছুতেই সু-পাত্রী মেলানো যাচ্ছে না। গত রাতে আবিরের ঘরে গিয়েছিলেন দুধের গ্লাস নিয়ে। সে কোন দিনই সেই দুধ খাই না । মায়ের চোখে পড়লো ছোট পুত্রের ল্যাপটপের পর্দায় অসাধারণ রুপবতী এক কন্যার ছবি। সে আনমনে তাকিয়ে আছে সে দিকে। মায়ের উপস্থিতি তার চোখে পড়েনি। যে কোন ভাবে এই কন্যার খোঁজ নিতে চান নূরী বেগম। কিভাবে নিবেন তিনি তা জানেন না। এই বিষয়ে আবিরের সাথে কথা বলতে হবে। আলতাফের কাছ কোন সাহায্যে পাওয়া যাবে না । সে আছে তার লেখালেখি নিয়ে..... বিখ্যাত লেখক জনাব আলতাব মাহমুদের আজ পঞ্চান্নতম জন্মদিন। নূরী বেগম ঘটা করে জন্মদিনের আয়োজন করেছেন। বড় ছেলে কবির মাহমুদ আগামী মাসে ইউএস যাচ্ছে স্কলারশীপ নিয়ে। লেখক সাহেব কিছু একটা গন্ধ পাচ্ছেন তবে সেটা কি তিনি ধরতে পারছেন না। তার ধারনা মানুষ সাধারনত একটা বয়সের পরে ব্রোঞ্জ,সিলভার,গোল্ডেন জুবিলী এই ভাবে জন্মদিন পালন করে। পঞ্চাশতম জন্মদিন কিছু লেখক প্রকাশক মিলে পালন করে ছিলেন বটে তবে নূরী বেগমের তেমন কোন আগ্রহ ছিল বলে মনে পড়ে না তার। নূরী বেগমের কড়া হুকুম সন্ধ্যা সাতটায় কেক কাটা হবে সে যেন বাড়ীর বাইরে না যায়। নিয়নের আলোয় ঝলমল করছে দশতলা ভবন। খাবারের অর্ডার দেওয়া হয়েছে নামীদামী হোটেল থেকে। কেক এসেছে ডি এইচ এল এয়ার কুরিয়ারে সিঙ্গাপুর থেকে। সেই কেক এর উপর লেজার টেকনোলজী দিয়ে জনাব আলতাব মাহমুদের আবক্ষ ছবি ছাপানো আছে। এই অনুষ্ঠানে তার কোন লেখক প্রকাশক বন্ধুদের দাওয়াত করা হয়নি। তবে দশতলা ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের মধ্য বয়স্ক তরুনী ও শিশুরা দাওয়াত পেয়েছে। কনা আর রুমী কে ডাকা হয়েছে। এই বিখ্যাত শিল্পীদ্বয় শুভ জন্মদিনের গান পরিবেশন করবেন।
আবির তার প্রিয় বাইক নিয়ে সন্ধ্যার পর বাড়ী ফিরছে। আজ কে তার বাবার জন্মদিন ঘটা করে পালন করা হবে। মা নূরী বেগমের কড়া আদেশ সন্ধ্যা সাতটার আগে বাড়ী ফিরে ছবি তুলতে হবে। আবিরের মন ভালো না । হ্যাপির শরীরটা ভালো যাচ্ছে না ঘন ঘন জ্বর সাথে বমি। হ্যাপীদের হোমে তেমন স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা নেই। হোমের পাশে একটা বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ আছে। সেখানে পড়ুয়া কিছু ছাত্র/ছাত্রী অনিয়মিত এই সব এতিম শিশুদের দেখতে আসে। হ্যাপিকে দেখে তারা কিছু টেষ্ট দিয়েছে। এই হোমের ফান্ড অতি সামান্য। টেষ্ট করার মত লোকবল বা অর্থ কোনটার জোর নেই কর্তৃপক্ষের। আগামী ছুটির দিন আবির তাকে নিয়ে যাবে কাছের কোন ডায়াগোনষ্টিক সেন্টারে।
সন্ধ্যা সাতটা। এই মাত্র বেলুন ফাটিয়ে ও কৃত্রিম তুষার বর্ষণের মধ্যে দিয়ে জনাব আলতাব মাহমুদ কেক কাটলেন। অতিথি বৃন্দ চলে যাবার পর। মা নূরী বেগম আলতাব মাহমুদ সহ তার দুই পুত্র কবির ও আবির কে নিয়ে নৈশভোজের টেবিলে বসে আছেন। নৈশভোজের পরে আবিরের তোলা ছবির প্রজেকশন হবে তাদের ৫৫ ইঞ্চি বিশাল আকৃতির এলইডি টিভিতে। আলতাব মাহমুদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন টিভি স্ক্রীনের দিকে। তার ছোট ছেলে এতো ভালো ছবি তোলে তিনি জানতেন না। নূরী বেগম অধীর অপেক্ষায় আছেন বিশেষ কিছু ছবির জন্য। “তিথির ছবি কোথায় পেলি”? কবির তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। এই কন্যা প্রকৌশল বিশ্ব বিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিথি ইলেকট্রনিক্স এর মালিক শাহরিয়ার মোরশেদ ও শামীমা মোরশেদের একমাত্র কন্যা তিথি মোরশেদ। নূরী বেগমের ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি সবার চোখ এড়িয়ে গেলেও লেখক আলতাব মাহমুদের চোখ এড়ানো গেল না.......
বেইজিং ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারর্পোট তিথি ইলেকট্রনিক্স এর মালিক জনাব শাহরিয়ার মোরশেদ বসে আছেন জানালার পাশের সীটে। সন্ধ্যার আকাশে বেইজিং ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারর্পোট কে প্লেন থেকে মনে হচ্ছে একখানা আলোর তৈরী পেয়াজ আকৃতির কোন ভিনগ্রহের স্থাপত্য শৈলী। আরো এক সপ্তাহ চায়না থাকার কথা তিনি থাকতে পারছেন না। তিথির মায়ের জরুরী ফোন। কারা যেন তিথি কে দেখতে আসবেন আগামী পরশু। বুকের ভিতরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আজ।
পাঁচ বছরের হ্যাপি বসে আছে মিরপুর ১০নং এর একটা ডায়াগোন্যাষ্টিক সেন্টারে। ইয়ামাহা R-15 মোটর বাইকের চাবী নিয়ে খেলছে। তার পাশে গম্ভীর মুখে বসে আছে আবির। হ্যাপির ব্লাড ও ইউরিন স্যাম্পুল নেওয়া হয়েছে সাথে আরো কিছু টেষ্ট করাতে হবে। পাটকাটির মত দেখতে কিন্নর কন্ঠী একজন নার্স হ্যাপির সাথে গল্প করার চেষ্টা করছে। হ্যাপি তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। হ্যাপি কথা বলতে পারে না কানেও কিছু শোনে না। তিন ঘন্টা পর রিপোর্ট দিবে। এখন সময় বিকাল পাঁচটা। সন্ধ্যা সাতটার সময় বিখ্যাত লেখক আলতাফ মাহমুদ কে স্ব-পরিবারে যেতে হবে তিথিদের বাড়ী।
তিথি বাবার হাত শক্ত করে ধরে আছে। তার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন বর্ষার দিনে বাবা তাকে থানা শহরের আমীন হোটেলে নিয়ে যেতেন। এক হাত দিয়ে ডালে ডুবিয়ে পরোটা খেত তিথি আর এক হাত দিয়ে বাবাকে শক্ত করে ধরে রাখতো যেন ছেড়ে দিলেই বাবা হারিয়ে যাবে আর খুজে পাওয়া যাবে না। তিথির খুব কান্না পাচ্ছে অথচ সে কাঁদছে না বাবার সাথে হেসে হেসে গল্প করছে।
সন্ধ্যা ৭.১০মি। BMW X5 গাড়ী থেকে স্ব-স্ত্রীক নামলেন বিখ্যাত লেখক আলতাফ মাহমুদ ও তাদের জোষ্ঠ্য পুত্র কবির মাহমুদ। আবির আসবে তার প্রিয় বাইকে। কথা ছিল আবির সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে তিথিদের বাড়ী চলে আসবে কিন্তু সে এখনো আসেনি। নূরী বেগম রাগে গজগজ করছেন তার কনিষ্ঠ পুত্রের উপর। তিথিদের বসার ঘরটি সুন্দর করে সাজিয়েছেন মা। নানা পদের খাবারের আয়োজন করেছেন। আজকে পাত্র পক্ষ আসবে তিথিকে দেখতে ...
বিশিষ্ট লেখক জনাব আলতাফ মাহমুদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তিথির দিকে। তিনি বিশেষ একটা গন্ধ অনুভব করছেন। তার মায়ের গন্ধ। মা মারা গিয়েছেন তার যখন ১৩ বছর বয়স । প্রতিদিন স্কুলে যাবার সময় মাথা আঁচড়িয়ে দিতেন মা তখন সে মায়ের গায়ে এই গন্ধটা পেত। আলতাফ মাহমুদের পাঞ্জাবীর ডান পকেটে একখানা হীরের আংটি । কবির মাহমুদ তার বাবার দৃষ্টিকে অনুসরন করছেন। মেয়েদের সাথে কবিরের তেমন ঘনিষ্ঠ হবার সুযোগ হয়নি তবে মনে হচ্ছে মা তার জন্য সঠিক পাত্রীই নির্বাচন করেছেন। লেখক সাহেব অপেক্ষায় আছেন স্ত্রী নূরী বেগমের গ্রীন সিগন্যালের। সম্মতি পেলেই আংটি পরিয়ে দেবেন তিথির অনামিকায়। সেই মুহূর্তে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলেন এক যুবক হাতে মোটর বাইকের চাবী। তিথি অপলক তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে যেন শত বছরের বিরহী রাঁধা। সময় থেমে গেছে। পৃথিবীর সকল পুষ্পের গন্ধ আর ভালোবাসার কবিতা দুজনের চোখের তাঁরায় ঝরে ঝরে পড়ছে। লেখক আলতাফ মাহমুদ অন্য কিছুর গন্ধ টের পেলেন। নূরী বেগমের কন্যা পছন্দ হয়েছে তিনি লেখক সাহেব কে আংটি পরানোর অনুমতি দিলেন.......
ডিসেম্বর মাসের কুয়াশা ঘেরা মধ্যে রাত্রি। আকাশে চাঁদ। ঘন কুয়াশায় জোসনার ভিতর এক ধরনের ঘোলাটে ভৌতিক আলোর প্রভা। শিশু হাসপাতাল থেকে হেঁটে হেঁটে বাড়ী ফিরছে দীর্ঘদেহী এক যুবক। দুরে ল্যাম্পপোষ্টের নিচে পলিথিনের তাঁবু থেকে ভেসে আসছে এক বৃদ্ধ ভিক্ষুকের মন পাগল করা হাছন রাজার গান “ বাউলা কে বানাইলো রে হাছন রাজারে কে বানাইলো রে......”। যুবক মনে করতে পারছেনা শেষ কবে সে এমন করে জোসনার ভিতর হেঁটে হেঁটে বাড়ী ফিরেছে। তার হাতের ভিতর ধরা এক জোড়া চুলের মৌ ক্লিপ। হ্যাপি তার কাছে এটা রাখতে দিয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে আবার মাথায় পরবে। পাঁচ বছরের হ্যাপির ফুসফুসে বড় ধরনের সমস্যা। অপারেশন প্রয়োজন। তিন লাখ টাকার মত লাগবে। টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। যুবক তার পাঁচ লাখ টাকার বাইক ধানমন্ডির মটর সাইকেল হাটে তিন লাখ টাকায় বিক্রী করে দিয়েছে। কুয়াশায় তার ভিতরে এক ধরনের বিভ্রম তৈরী হয়েছে । মনে হচ্ছে তিথি তার পাশে পাশে হাটছে সে অনুভব করছে কিন্তু দেখতে পারছে না....আবীর এই ছবি মুছে ফেলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না.......
হ্যাপী আজকে মহা খুশী। তার অপারেশন সফল হয়েছে। সে আজ পরেছে লাল সবুজ রঙের জামা। মাথার চুলে মৌ ক্লিপ । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে সে আর আবির সারাদিন রিক্সা করে ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াবে। আবিরের হাতে ধরা একটা খাম। এসেছে ন্যশন্যাল জিওগ্রাফী পত্রিকা থেকে। হ্যাপিকে নিয়ে তোলা ছবি প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। টাকার অংক একেবারে ফেলনা নয় বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মত।
আজ কবিরের সাথে তিথির বিয়ে সন্ধ্যা সাতটায়। কবির যাচ্ছে গলির মোড়ে সেলুনে চুল কাটতে। সে প্রতি মাসে একবার এখানে আসে। কোন এক রহস্যময় কারনে আজকে তার বাসার সামনে এফবিআই এর BMW X5 গাড়ীটি দেখা যাচ্ছে না। সেলুনের সামনে একটি কালো গ্লাসের মাইক্রোবাস দাড়ানো। কবির সেলুনের ভিতর ঢোকার সাথে সাথে তার মাথার পিছনে ধাতব কিছুর আঘাতে জ্ঞান হারালো। নূরী বেগম চা দিতে এসে খেয়াল করলেন কবির তার সেলফোন বিছানার উপর ফেলে গেছে। বেলা ১২টার সময় লেখক আলতাফ মাহমুদ তার বড় পুত্রের খোজে গেলেন সেলুনে । তার মাথার উপর বিমান বাহিনীর ফাইটার প্লেন গুলি লাল সবুজের পতাকা নিয়ে এক্রোব্যাট করছে। বিমান থেকে পতাকা সহ নেমে আসছে প্যারাটুপার গন। জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে সকল বাহিনীর অভিবাদন গ্রহন করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি জনাব আব্দুল হামিদ। সেলুনের চারিদিকে পুলিশের পাহারা। সেলুনের মালিক খুন হয়েছেন। তাকে খুন করা হয়েছে মাথার খুলিতে অতি কাছ থেকে গুলি করে। কবিরকে সেখানে পাওয়া গেলা না। দুরে কোথাও মাগরিবের আজান শোনা যাচ্ছে। কবিরের জ্ঞান ফিরেছে। তাকে আনা হয়েছে একটি আন্ডার কনসট্রাশন বিল্ডিং এ। তার হাত পা শক্ত করে বাধাঁ তবে চোখ খোলা আছে। তার সামনে তিন জন মানুষ। সবার হাতে নাইন এম এম পিস্তল তাতে সাইলেন্সার লাগানো । তাদের একজন ডাক্তার তিনি তুরস্কের নাগরিক । বাংলাদেশের একটি মিশনারী হাসপাতালে কাজ করেন। আর একজন ইঞ্জিনিয়ার তিনি চীনা নাগরিক। আমাদের দেশের নির্মাধীন একটি সেতুর প্রজেক্টের দায়িত্বে আছেন। তৃতীয় জন একটি দেশের দূতাবাসের বড় কর্মকর্তা। এরা তিনজন একটি কুখ্যাত জঙ্গী সংগঠনের হয়ে কাজ করেন।
রাত ৯টা বেজে গেছে। সানাই বাদকের দল ক্লান্ত হয়ে নিঃশব্দে ফিরে গেছে। দুরে কোথাও বিজয় দিবসের ওপেন এয়ার কনসার্ট থেকে জেমস এর দরাজ গলায় গান ভেসে আসছে..... তুমি ছেলে হারা মা জাহানারা ইমামর একাত্তরের দিনগুলি তিথি অনবরত তার নীল তোয়ালেতে চোখ মুছে যাচ্ছে। বাবা তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছেন। মা বসে আছেন জায়নামাজে । রাত ১১.৩০ মি. । কবির কে জানানো হয়েছে তার এস,ডি 1.0 ( সিক্রেট ডিভাইস ) এর সার্কিট ডায়াগ্রাম আর সফটওয়্যার দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কবির জানে এই ডিভাইস এদের হাতে পড়া মানে গোটা পৃথিবী বিপদের মধ্যে পড়ে যাবে।। কবির সফওয়ার না দেবার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে । ডাঃ সাহেব তার ব্যাগ থেকে তিব্র মাত্রায় পেথিডিন ইনজেক্ট করলেন কবিরের শরীরে। পেথিডিনের তীব্রতায় সে কোন যন্ত্রনা টের পাচ্ছে না। তার হাতের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে প্রবল রক্তে ভেসে যাচ্ছে কংক্রীটের মেঝে। তার খুব মায়ের কথা মনে পড়ছে। রাত ১১.৫৫ মি. ১৬ই ডিসেম্বর । জাতীয় বিজয় দিবসের বার্ষিকীতে প্রাণ দিলেন নতুন প্রজন্মের এক মুক্তিযোদ্ধা…..
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কাজী প্রিয়াংকা সিলমী
কাহিনীটি খুব খুব ভাল লেগেছে। পড়া শুরু করার সময় একদম ভাবিনি যে বিয়ের গল্পের সাথে দেশপ্রেমের থিম চলে আসবে। অভিনন্দন। আমিও এ সংখ্যায় একটা লেখা লিখেছি, পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী
দীর্ঘদিন পর আপনার আরেকটি লেখা পড়লাম। লেখার ভাব আমাকে আমাকে বিমুগ্ধ করে ফেলেছে। কিছু রসাত্মক, কিছু ঘটনা গল্পটিকে অন্যরকম ভালো লাগায় রূপান্তর করেছে। বরাবরের মতোই অনেক শুভ কামনা ও ভোট রইল।
নাজমুল হুসাইন
তিথি অনবরত তার নীল তোয়ালেতে চোখ মুছে যাচ্ছে। বাবা তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছেন। মা বসে আছেন জায়নামাজে । ভালো লাগা রইলো ভাই।তবে ইনজেকশন পর্যন্ত না গিয়ে ওখানেই থমকে দিলে,যা হত,অর্থাৎ শেষ হইয়াও হইলো না যেন শেষ।ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করলাম মাত্র।তবে গল্পকার হিসেবে আপনার ভাবনাকে স্যালুট জানাই।ধন্যবাদ।আসবেন আমার পাতায়।
সুপ্রিয় ঘোষাল
ভালো লেগেছে। গল্পকার বেশ সূত্রধরের মত গল্পটিকে গেঁথেছেন। গল্পের চলন এওকটু দ্রুতগামী। তবে শেষ পর্যন্তসব কিছু এরকম স্পষ্ট না করলেও চলত। গল্পের মেসেজটি বহুমুখী হয়ে গেল শেষ বিচারে। শুভকামনা রইল। আরও লিখুন। ভালো থাকুন।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
বিষয়ের সাথে শতভাগ সামঞ্জস্যতা আছে কি না শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে প্রিয় অগ্রসর পাঠক..ধুতরাফুল।
১৫ ফেব্রুয়ারী - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
১৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।